১। উপজেলার নামকরণ ঃ
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ বাংলাদেশের উত্তর পর্বাঞ্চলীয সীমান্তবর্তী বিভাগ সিলেট। সিলেট বিভাগের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলা মৌলভীবাজার। এই মৌলভীবাজার জেলার প্রাণকেদ্র হচ্ছে মৌলভীবাজর সদর উপজেলা, যার নাম করণ মৌলভীবাজার জেলার নামানুসারে। জেলা হিসেবে মৌলভীবাজার অভিষিক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। এর পূর্বে ১৮৮২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাদের প্রশাসনিক প্রয়োজনে সিলেটের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে সাউথ সিলেট সাব-ডিভিশন নামে একটি মহকুমা গঠন করেন। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে আগত হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) শের সওয়ার চাবুকমার বোগদাদী নামে একজন বিখ্যাত সাধক ছিলেন। বৃটিশ শাসনকালের উষালগ্নে ১৭৭১ সালে তাঁর অধস্তন বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্যা সাহেব ছিলেন একজন মুন্সেফ। তিনি তাঁর জমিদারী এলাকায় তৎসময়ে একটি বাজার স্থাপন করেন। তাঁর নাম অনুসারে ঐ বাজারের নাম হয় মৌলভীবাজার। ১৮৮২ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত সাউথ সিলেট সাব-ডিভিশন ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকে। ১৯৬০ সলে তৎকালীন জনপ্রিয় মহকুমা প্রশাসক ড. এম এ ছত্তার এর কার্যকালে সাউথ সিলেট সাব-ডিভিশন নাম পরিবর্তন করে মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্যা সাহেবের নাম অনুসারে মৌলভীবাজার মহকুমা রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচীর আওতায় মৌলভীবাজার জেলায় রূপান্তরিত হয়। মৌলভীবাজার জেলার মোট ০৭ উপজেলার মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা একটি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার উত্তরে রাজনগর উপজেলা এবং সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে শ্রীমঙ্গল উপজলা, পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সড়ক পথে উপজেলা পরিষদের দুরত্ব প্রায় ৩.৮ কিলোমিটার। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এই এলাকার যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এই উপজেলার মধ্য দিয়ে গেছে। মহাসড়ক ছাড়াও এই উপজেলায় প্রায় ২৯০ বর্গকিলোমিটার পাঁকা রাস্তা রয়েছে। তাছাড়া আধা পাঁকা ও কাঁচা রাস্তা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
৪। আয়তন
৩৪৭.৯৬ বর্গকিলোমিটার
৫। লোক সংখ্যা
মোট লোক সংখ্যা ঃ ৩৪২৪৬৮ জন। (২০১১ সালের আদম সুমারী অনুযায়ী)
পুরম্নষ ঃ ৭১৬৭৮ জন
মহিলা ঃ ৭০৭৯০ জন।
৬। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঃ ২.০৮%
৭। শিক্ষা সংক্রামত্মঃ
শিক্ষার হার ঃ ৫৪.৯ %
বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা ঃ নেই
সরকারি কলেজের সংখ্যা ঃ ০২ টি
সিনিয়র মাদ্রাসা ঃ ০১ টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ঃ ৩০ টি
দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা ঃ ১৫ টি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ঃ ১৮৯ টি
৮। স্বাস্থ্য সংক্রামত্মঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঃ ০১ টি
ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঃ ০৪ টি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যণ কেন্দ্রের সংখ্যা ঃ ০২ টি
কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ঃ ২৮
৯। কৃষি সংক্রামত্মঃ
মোট জমির পরিমাণ ঃ ৩৪.৪১৯ হেক্টর
নীট ফসলী জমি ঃ ২২৪২৩ হেক্টর
মোট ফসলী জমি ঃ ৩৮,৪২৯ হেক্টর
অগভীর নলকূপ ঃ ১৬ টি
শক্তি চালিত পাম্প ঃ ১১৭৬ টি
১০। গোযাযোগঃ
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সড়ক পথে উপজেলা পরিষদের দুরত্ব প্রায় ৩.৮ কিলোমিটার। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এই এলাকার যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এই উপজেলার মধ্য দিয়ে গেছে। মহাসড়ক ছাড়াও এই উপজেলায় প্রায় ২৯০ বর্গকিলোমিটার পাঁকা রাস্তা রয়েছে। তাছাড়া আধা পাঁকা ও কাঁচা রাস্তা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে বাসযোগে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, রাজশাহীসহ ইত্যাদি জেলায় যাতায়াত করা যায়। এছাড়া সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল পর্যমত্ম যেয়ে রেলযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা যায়। শেরপুর লঞ্চঘাট থেকে নদীপথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা যায়।
১১। ঐতিহাসিক/দর্শনীয়স্থান/পর্যটন স্থানঃ
ঐতিহাসিক খোজার মসজিদ
অত্র উপজেলায় ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে অন্যতম সুলতানী আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক খোজার মজসিদ। ১৪৭৬ সালে সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি সদর উপজেলা হতে প্রায় ৩ কিলোমিটর দূরে মোসত্মফাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। রিক্সায় অথবা গাড়িতে করে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
সৈয়দ শাহ মোসত্মফা (রঃ) মাজার শরিফ
উপজেলার প্রসিদ্ধ স্থানের মধ্যে রয়েছে শহরের দক্ষিণ দিকে হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) এর মাজার শরিফ। হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) ইরাকের বাগদাদ নগরী থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এখানে আসেন। তিনি ছিলেন হযরত শাহ-জালাল (র) এর অন্যতম সফরসঙ্গি। তার জীবন কাহিনী হতে জানা যায়, তিনি বাঘের পিঠে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। তার ইন্তিকালের পর এখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয় এবং এখানেই তার মাজার শরিফ নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর তাঁর মৃত্যু তারিখে এখানে পবিত্র ওরস শরিফ অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ষিজোড়া ইকো-পার্ক
মৌলভীবাজার শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত বর্ষিজোড়া ইকো-পার্ক। শহর সংলগ্ন হওয়ায় রিক্সায় করে সহজে যাতায়াত করা যায়। পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রচূর লোকের সমাগম ঘটে।
মনু ব্যারেজ ও রাঙ্গাউটি রিসোর্ট
মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব দিকে প্রায় ৪ কিলেমিটার দূরে অবস্থিত মনু ব্যারেজ এবং মনু নদীর পুরাতন অংশ নিয়ে গঠিত বিশাল লেক। এই লেকের উত্তর পার্শ্বে রয়েছে রাঙ্গাউটি নামক একটি রিসোর্ট। ব্যারেজ, রিসোর্ট এবং লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন প্রচূর লোকের সমাগম হয় এখানে।
দোসাই রিসোর্ট
দোসাই রিসোর্ট ও স্পা মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় অবস্থিত পাঁচ তারকা মান সম্পন্ন একটি রিসোর্ট। এতে রয়েছে পাঁচ তারকা সুবিধা সম্পন্ন রিসোর্ট, হোটেল, স্পা সেন্টার, লেক। আমত্মর্জাতিক মান সম্পন্ন এ রিসোর্টটি দেশি বিদেশী পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণস্থল।
১২। সমস্যাঃ
মৌলভীবাজার শহরের মধ্য দিয়ে পূর্বেকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি অবস্থিত। হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শ্রীমঙ্গলসহ দেশেরঅনেক এলাকার ভারী যানবাহন এ সড়কটি দিয়ে সিঠে যাতায়ত করে। শহরের মধ্য দিয়ে মহাসড়ক যাওয়াতে যানজট দিন দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়া দূর্ঘটনার হারও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে শেরপুরে স্পেশার ইকোনমিক জোন স্থাপিত হলে এ সড়ক দিয়ে রেল পথের পণ্য পরিবহন হবে এবং মালামাল বহনকারী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই জরম্নরী ভিত্তিতে মৌলভীবাজার শহরের পাশ দিয়ে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল রোডে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ছোট বড় অনেক হাওর রয়েছে। হাওরকে কেন্দ্র করে অনেক লোক জিবীকা নির্বাহ করে। এখান থেকে উৎপাদিত মাছ দেশ বিদেশের চাহিদা মেটায়। এছাড়া হাওর এলাকায় বোরো মৌসুমে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। হাওর অধ্যুষিত এাকা হওয়ায় সত্ত্বেও এ সংক্রামত্ম কোন উন্নয়ন কার্যক্রম অদ্যাবধি এখানে গৃহীত হয়নি। তাই মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে অমত্মর্ভূুক্ত করা প্রয়োজন।
পলি জমে মনু নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমছে। এতে প্রয়োজনের সময় পনির অভাবে সেচ কার্য বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন দিন দিন কমছে। তাছাড়া পাহাড়ি ঢলের কারণে উজানের পানি মনু নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায়শই সদর উপজেলার বিসিত্মর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। তাই জরম্নরী ভিত্তিতে মাতারকাপন মনু ব্যারেজ হতে মনুমুখ পর্যমত্ম মনু নদী খনন এবং গোপলা নদীর ভরাট অংশ খনন জরম্নরী।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধটি থেকে আকষ্মিক মাটি সরে যাওয়ায় শহরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থা হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় বাঁধটি ভেঙ্গে শহর এলাকা বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তাই জরম্নরী ভিত্তিতে শহর রক্ষা বাধটি সংস্কার প্রয়োজন।
আখাইলকুড়া ইউনিয়নে চাঁন্দপুর ও সুমারাই মৌজায় মনু নদীর ভাঙ্গনের ফলে অনেক বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। জরম্নরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধকল্পে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে আরো অধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
১৩। সম্ভাবনাঃ
চাঁ, আনারস, লেবু ইত্যাদি রপ্তানীযোগ্য কৃষি সম্পদ উন্নয়ন সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে আকবরপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপামত্মর করণ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর স্থানটি তিনটি জেলার (হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট) সংযোগস্থল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্বে। অত্র এলাকায় একটি ইকোনমিক জোন স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম দ্রম্নত বাসত্মবায়ন প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া নামক স্থানে একটি ইকো-পার্ক রয়েছে। যে আদলে পার্কটি করার কথা ছিল বলে জানা যায়, সেভাবে কাজ সম্পন্ন হয়নি। দ্রম্নত পার্কটির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এতে পর্যটন সমৃদ্ধ মৌলভীবাজারের গুরম্নত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
যাতায়ত ব্যবসা বাণিজ্য, পর্যটন শিল্পকে আকৃষ্টকরণ এবং স্পেশাল ইকোনমিক জোনের পণ্য আদান প্রদানের সুবিধার্থে মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে রেল যোগাগের আওতাভুক্ত করণ।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS